সাংবাদিক হওয়া খুব একটা জরুরী কোন স্বপ্ন নয়। তার চেয়ে বরং অনেক ভালো ডাক্তার -ইঞ্জিনিয়ার হওয়া , সামরিক- বেসামরিক আমলা হওয়া ,এমন কি আইটি প্রাকটিশনার হওয়া ….ব্যবসায়ী হতে পারলে তো আরও ভালো ,সব পেশার সবাইকে চাকরি দেওয়া যায়। অবসরপ্রাপ্ত সচিবদের ,জেনারেলদের চাকরি দেওয়ার আনন্দই আলাদা। তবু কেন যে কিছু লোক সাংবাদিক হয় ,ভাবলে আমার বেশ খটকা লাগে।
আমাদের অল্প বয়সে শুনতাম ,যার নেই কোন গতি ,সে করে হোমিওপ্যাথি। অথবা কোথাও কিছু করতে না পারলে হয় , বটতলার উকিল ,নয়তো গাছতলার স্কুলের টিচার্। এ সব পেশার লোকদের বউ পাওয়ায় কস্টের হত। ( যদিও মেয়ের অভাবে বিয়ে হয়নি এমন লোক একজন ও পায়নি ) তারপরও এসব পেশার অনেক মানুষ আমাদের পাশে চারপাশে ঘুরে বেড়াত। ইন্স্যুরেন্সের দালাল ছিল অনেক। কিন্তুু সবচে কম পেশার লোক দেখতাম তারা হলো সাংবাদিক। এ পেশায় লোক খুব একটা যেতে চাইতো না। বুঝতে অসুবিধা হয়না এর কারণ দুটো ,ঝুঁকি ,জীবনের ও পকেটের্। তারপরও কাউকে কাউকে হঠাৎ হঠাৎ দেখতাম সাংবাদিকতা করছে। এটা দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগত। কিন্তুু এখানেও দেখতাম দারিদ্র্যের ছাপ। যে লোকটার পত্রিকার পাতায় প্রতিদিন ছাপা হচ্ছে ….যে লোকটা সমাজের মাথাধরা লোকগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে ,সেই লোকটার আর্থিক দুর্গতি আমার সহ্য হত না। আজও হয় না। কিন্তুু সেই সব দুঃসহ কস্ট সয়েও যারা সাংবাদিকতা করত ,আমার খুব জানতে ইচ্ছে করত কেন তারা এসব করে। ঘরের খেয়ে কেন তারা বনের মোষ তাড়ায়?
এ প্রশ্নের উত্তর আমি পেয়েছি বেশ পরে। যখন নিজেই এই পেশাকে বেছে নেই জীবনের অনুষঙ্গ হিসেবে।সমাজে কিছু মানুষ থাকে যারা চারপাশের অনিয়ম ,অন্যায় ,অত্যাচার ,অপকর্ম ,বঞ্চনা ,গঞ্চনা সহজে মেনে নিতে পারে না। তারা যখন দেখে একজন অত্যাচারিত ,বঞ্চিত ,দরিদ্র মানুষ জনপ্রতিনিধি ,প্রশাসন ,আদালতের কাছে সুবিচার পাচ্ছে না তখনই তারা এ প্রতিবাদের পন্থা খোজেন। হয়তো এরই একটা অংশ হয়ে ওঠে সাংবাদিকতা। ম্লান মুখে ভাষা জোগাবার জন্য।
কাজেই এ পেশায় যিনি আসেন তিনি নিছক একটা পেশা পাওয়ার তাগিদে আসেন তা নয় , তিনি মুলত আসেন একজন প্রতিবাদি হিসেবে আর ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন প্রতিবাদের ধারাবাহিক লেখক। লোকে যাকে বলে সাংবাদিক। ঝিনুক যেমন তার বুকের ক্ষত নিয়ে প্রচন্ড বেদনার মধ্য দিয়ে ও মুক্তা জন্ম দেন। একজন সত্যিকারের সাংবাদিক ও সমাজের সব ক্ষত প্রকাশ করতে গিয়ে সাংবাদিকতার জন্ম দেন। নাসিম উদ্দীন নাসিম।