সুখে-শান্তিতেই থাকতে চেয়েছিল মেয়েটি। ঘরও বেঁধেছিল একজনের সঙ্গে। কিন্তু শান্তির সুবাতাস একদিন বিদ্রোহ করে বসে। শুরু হয় ঝড়ো বাতাস। এই বাতাসে টালমাটাল হয়ে যায় সবকিছু। মে মাসের শেষদিকে মাস্ক তৈরির একটি কারখানায় কাজ নেন। হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচেন। কলিজার টুকরো তিন বছরের মেয়ে কুলসুমকে নিয়ে নতুন স্বপ্নে বিভোর হয়ে শুরু হয় সুস্থ-সুন্দর জীবনের পথচলা।
বিজ্ঞাপন
Featured News
গণধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যা করা হয় শারমিনকে
গণধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যা করা হয় শারমিনকে
June 13, 2020 | 5:30 pm
82
Shares
sharethis sharing button
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: সুখে-শান্তিতেই থাকতে চেয়েছিল মেয়েটি। ঘরও বেঁধেছিল একজনের সঙ্গে। কিন্তু শান্তির সুবাতাস একদিন বিদ্রোহ করে বসে। শুরু হয় ঝড়ো বাতাস। এই বাতাসে টালমাটাল হয়ে যায় সবকিছু। মে মাসের শেষদিকে মাস্ক তৈরির একটি কারখানায় কাজ নেন। হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচেন। কলিজার টুকরো তিন বছরের মেয়ে কুলসুমকে নিয়ে নতুন স্বপ্নে বিভোর হয়ে শুরু হয় সুস্থ-সুন্দর জীবনের পথচলা।
বিজ্ঞাপন
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উত্তরখান থানা এলাকার বৈকাল রোডের একটি নির্জন স্থানে গত শুক্রবার ৫ জুন রাতেই খুন হন শারমিন। এলাকার চারজন শারমিনকে ধর্ষণের পর চাপাতি দিয়ে গলার একপাশে কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। পরদিন সকালে খবর পেয়ে ছুটে আসে উত্তরখান থানা পুলিশ। খবর দেওয়া হয় সিআইডির ক্রাইম সিনকে। লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করে লাশ পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢামেক মর্গে।
উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হাফিজুর রহমান রিয়েল বলেন, ‘বিকেলেই ডিসি নাবিদ কামাল শৈবাল স্যারের পরামর্শে পিবিআইর মাধ্যমে আঙুলের ছাপ নেওয়ার ব্যবস্থা করি। একসময় লাশের পরিচয় মেলে। মেয়েটির বাবা মর্গে গিয়ে নিজের মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন।’
এডিসি হাফিজুর রহমান রিয়েল জানান, উত্তরখানের সিদ্ধিরটেক এলাকা। এখানেই হাজী মাহাতবের ভাড়া বাড়িতে পাশাপাশি রুমে চারটি পরিবার ভাড়া থাকে। ভিকটি, শারমিন তার বাবা-মা আর একমাত্র মেয়ে কুলসুমকে নিয়ে ছিল এখানেই। একসময় পাশের রুমের বিবাহিত ফুরকানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে শারমিনের; তা একসময় শারীরিক মেলামেশায় রূপ নেয়। পরে ফুরকান জানতে পারে শারমিন টাকার বিনিময়ে আরও অনেকের সঙ্গেই এভাবে মেলামেশা করে। এতে ভেতরে-ভেতরে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে থাকে সে। একদিন কাছের সহকর্মী মাসুদের মাধ্যমে ফুরকান জানতে পারে মাসুদ আর শারমিনের সম্পর্কের কথা।
এই মাসুদকে শারমিনের সঙ্গে ফুরকানই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। অথচ তারা ফুরকানের অজান্তেই জড়িয়েছে মেলামেশায়। মাসুদকে ফুরকান কিছু বলতে পারে না,কারণ মাসুদ ছিল মাস্টারমাইন্ড টাইপের একজন ভয়ঙ্কর ক্রিমিনাল। কিন্তু গত শুক্রবার সকালে মাসুদ অনেক অভিযোগ নিয়ে আসে ফুরকানের কাছে। ফুরকানসহ আরও অনেকের কাছেই টাকা নিয়ে তাদের ডাকে নাকি সাড়া দেয়নি শারমিন। মাসুদ, ফুরকানের মতো এ রকম আরও দুজন ভিড়ে যায় ওই দলে। সবার অভিযোগ আগাম টাকা নিয়ে সাড়া দেয়নি মেয়েটি। চারজনের রাগ এক হয়ে ক্ষোভের বোমা তৈরি করে তাদের মনে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫ জুন শুক্রবার বিকেলে স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে খুব হাসিমুখে শারমিনের সঙ্গে কথা বলতে থাকে ফুরকান। শারমিনের সঙ্গে খুব ভালো একটা আলাপ আছে বলে সন্ধ্যা ৭টার পরে গেটের বাইরে দেখা করতে বলে। শারমিন সময়মতো বাইরে বের হয়ে আসে। ফুরকানের সঙ্গে ধীরে ধীরে সামনে হাঁটতে থাকে। একটু দূরে মাসুদকে দেখে চমকে উঠে শারমিন। মাসুদ সরাসরি টাকা নিয়ে ঘুরানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে শারমিন চুপ থাকে। একটু পরে যোগ দেয় সাইফুল ও আনোয়ার। তারা সবাই খারাপ কাজে রাজী করাতে থাকে শারমিনকে। কী মনে করে শারমিন রাজি হয়ে যায়। শারমিনসহ পাঁচজন ঢোকে বৈকাল রোডের একটি নির্জন জায়গায়। মাসুদ চারজনের হিসেবে সাড়ে তিনহাজার টাকা দেয় তুলে দেয় শারমিনের হাতে।
একে একে সবাই শারমিনকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে হঠাৎ শারমিনের হাত দুটো ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলে মাসুদ। এতে শারমিন বেশ হচকচিয়ে যায়। টাকা-পয়সা নিয়ে ঘুরানোর বিষয়ে তর্ক শুরু হয়। শারমিন মাস্ক তৈরির কারখানায় কাজ নিয়েছে এবং এসব বাজে কাজ ছেড়ে দিয়েছে বলে জানালে ওরা আরও ক্ষিপ্ত হয়। সকাল হলে এই কাহিনি শারমিন সবাইকে বলে দেবে জানালে চারজনই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। মাসুদের হুকুমে এক পর্যায়ে ফুরকান হাত ও মুখ চেপে ধরে আর সাইফুল ও আনোয়ার চিপে ধরে পা দুটো। তার আগে সাড়ে তিনহাজার টাকা কেড়ে নেয় মাসুদ। পরে কোমর থেকে ধারালো চাপাতি চালিয়ে দেয় শারমিনের গলায়। রক্ত যাতে না ছিটকে পড়ে সে জন্য সালোয়ার দিয়ে বেশ কয়েকটি প্যাঁচ দেয় গলায়। আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে আসে শারমিনের নিথর দেহ।
এডিসি হাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘উত্তরা জোনের ডিসি নাবিদ কামাল শৈবাল স্যারের তত্ত্বাবধানে রাত-দিন পরিশ্রম করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জামালপুরের বকশিগঞ্জ থেকে ফুরকান ও উত্তরখানের বিভিন্ন জায়গা থেকে মাসুদ, সাইফুল ও আনোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়। এক্ষেত্রে ডিএমপির আইএডি বিভাগ নিরবচ্ছিন্নভাবে সহায়তা করেছে। দুজন আসামি শুক্রবার (১২ জুন) বিজ্ঞ আদালতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার ব্যাপারে তাদের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।’