নিজস্ব প্রতিবেদক নিউজ লাইন ৭১ বিড:
সিনিয়র সহকারী জজ উমা ঘর বেধেছিলেন ডা. দেবাশীষের সাথে। নিজে বিচারক বিয়ে করেছিলেন একজন চিকিৎসককে, ইচ্ছা হয়তো ছিলো সেবা ধর্মের। বিচার বঞ্চিতের জন্য ন্যায়বিচার, অন্যদিকে অসহায়দের ডাক্তারি সেবা। ভালোই চলছিলো উমা দেবাশীষের সংসার -কোল জুড়ে এসেছিলো এক ফুটফুটে সন্তান। হঠাৎ করেই উমার সংসারে হানা দিলো সর্বনাশা করোনা। মানব সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক স্বামী হার মানলেন করোনার কাছে। স্বামীকে হারিয়ে নতুনভাবে চিনলেন আপনার আপন জনকে। চেনা জগৎটাই অচেনা হয়ে উঠলো। আড়াই বছরের অবুঝ সন্তান অন্যদিকে হাসপাতালের মর্গে স্বামীর মরদেহ। উমার পায়ের নীচে মাটি না থাকলেও শক্ত ভিত্তির উপর নিজেকে দাড় করালেন। একা এবং একাই আয়োজন করলেন স্বামীর শেষ যাত্রার, বাড়ি থেকে শিশু পুত্রের হাত ছুইয়ে পাটকাঠী সাথে নিয়ে আসলেন শহরের শশ্বান ঘাটে, শাস্ত্রমতে পুত্র সন্তানেরই যে দায়িত্ব পিতার মুখাগ্নিতে।একাই নিরবে নিথরে নির্জন শশ্বানভুমিতে অপেক্ষা করলেন উমাদেবী, কিছুক্ষনের মধ্যেই মৃতদেহ আসলো শশ্বানে, যে কয়জন মৃতদেহ নিয়ে এসেছিলো তাদের সাহায্যেই স্বামীর সৎকারের কাজ শুরু করলেন। উমা ভালোভাবেই বুঝেছিলেন নিজেদের বিপদকে উপেক্ষা করে যারা মানুষের বিপদে এগিয়ে আসে, তারাই প্রকৃত মানুষ। তাদের জাতের প্রয়োজন হয় না। পুত্রসন্তানের হাতের ছোয়া কাঠিতে মুখাগ্নি করলেন স্বামীর। ঘন্টা তিনেক স্থির হয়ে দাড়িয়ে রইলেন জলন্ত শশ্বানের দিকে তাকিয়ে। একাই এসেছিলেন উমাদেবী শশ্বানভুমিতে, চিতার আগুনে স্বামীর দেহ বিলীন করে দিয়ে একাই নিজে নিজের কপালের সিদুর মুছলেন, নিজেই ভেংগে ফেললেন নিজের হাতের মংগল শাখা, বিধবা বেশে একাই রওনা দিলেন বাড়ির পথে। সে জানে বাড়িতে কেউ নেই আজ, শুধু আড়াই বছরের সন্তান।
ভালো থাকুক উমা, ভালো থাকুক তার শিশুটি।
আপনাকে/আমাকে সেবা দিতে গিয়ে অনেক উমায় বিধবা হবে, অনেক সন্তানই পিতাকে হারাবে, মা হারাবে সন্তানকে।
তাদেরকে যেন আমরা মনে রাখি ।
নিউজ লাইন ৭১ বিড